জৈবসার
-এন. কে. মণ্ডল
অনেক বছর আগেকার কথা তখন হাটে বাজারে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে,এমনকি খোদ মুর্শিদাবাদে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না বা খুবই মুশকিল জনক ভারত-চীন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সব জায়গাতেই পেঁয়াজের আকাল। আর যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে আকাশছোঁয়া দাম। কেজিপ্রতি দুইশত টাকা। হিন্দুরা আগে পিয়াজ খেতো না এখন খায় মুসলিমরা তো খেতো প্রথম থেকেই হয়তো প্রায় সকলেই খায়। এবং বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। বিদেশে রপ্তানির ফলে দেশে ঘাটতি দেখা দিল, এমনকি মুর্শিদাবাদ জেলাতে ও পেঁয়াজের প্রচুর দাম।
কয়েক বছর প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপন্ন করতে হয়েছিল এবং তাতে কৃষকের ভালই মুনাফা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর হঠাৎ করে কৃষকের ওপর দুঃখ নেমে আসলো বিশেষ করে বটেশ্বর গ্রামের চাষীদের। সেবছর সমস্ত দেশে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছিল। কোন দেশে রপ্তানি হয়নি। পেঁয়াজ লাগেনা। আর এদেশে এত পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে তা চাষীরা বিক্রয় করে তাতে খরচের দশভাগ উঠবে না। পেঁয়াজের দাম নেই। কুইন্টাল প্রতি দুইশত টাকা। যেখানে প্রতিবছর কুন্টাল প্রতি মূল্য থাকে তিন হাজার টাকার আশেপাশে। দাম না থাকার ফলে চাষীদের মাথায় হাত। কোন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কেনা তো দূরে থাক পেঁয়াজের কথা শুনতে চাচ্ছে না। যদিও বা কোনো ব্যবসায়ী কিনছে তাতে আংশিক মূল্য দিয়ে ক্রয় করছে।
এই সমস্যা হওয়াতে বটেশ্বর গ্রামের একজন বুদ্ধিমান চাষী গ্রামের সমস্ত চাষীকে বললেন যে, দেখো পেঁয়াজের দাম নেই আর কেউ কিনছে না। পেঁয়াজ অনেকেই ইতিমধ্যে ফেলে দিতে হয়েছে। তাই তিনি বললেন যে তিনি কিনবেন। উনার নাম নিরঞ্জন চক্রবর্তী। বুদ্ধিমান লোক। গ্রামের সমস্ত পেঁয়াজ চাষীদের কাছে পঞ্চাশ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে তার বাগানের মস্ত পুকুরে ফেলে পুকুর ভর্তি করলেন। মানুষ তো অবাক পেঁয়াজ চাষীদের তো তাও কুইন্টাল প্রতি পঞ্চাশ টাকা পেয়েছে কিন্তু নিরাঞ্জন বাবু পেঁয়াজ কিনে মস্ত পুকুরটাকে বোঝালেন তাতে আবার বেশি করে পচানোর জন্য ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন রাসায়নিক সার এবং এক ট্রাক্টর লবণ দিয়ে পুকুরটাতে ঢেলে দিয়ে মোটা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে দিল। গ্রামের মানুষ এবার নিরঞ্জন বাবু কে ঠাট্টা উপহাস করতে লাগলো।
যে এতদিন জানতাম তিনি জ্ঞানী লোক কিন্তু এখন জানলাম তিনি আসলেই পাগল। কিন্তু চাষীদের এই ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেল কয়েক মাস বাদে। নিরঞ্জন বাবু আস্ত একটা জৈব সারের ফ্যাক্টরি করে ফেলেছেন। তারপরে নিরাঞ্জন বাবু চাষীদেরকে কেজি দশেক করে সার বিনামূল্যে দিলেন। তারপর জমিতে সার দেওয়ার ফলে জমির ফলন বেড়ে যায়। নিরঞ্জন বাবু সেই পেঁয়াজ পচা সার তখন প্রচুর চড়া দামে বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যায়। আর চাষিরা নিরঞ্জনবাবুর টাকা দেখে আফসোস করে মরে।